সমুদ্র সৈকতে গুপ্তখাল খাল চিনবেন কিভাবে?

সমুদ্রের নীল জলে নেমে গা ভেজাতে চান সব পর্যটকই। কিন্তু সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে অল্প গভীরতায়ই একাধিক পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা আতঙ্কিত করে দিয়েছে ভ্রমণ প্রেয়সীদের। এই ঘটনাকে ঘিরে অনেকেই বলছেন, কক্সবাজার সৈকতের লাবনী পয়েন্টে সৃষ্টি হয়েছে গুপ্ত খালের। যা কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ। এটা কী আসলেই গুপ্ত খাল? নাকি অন্য কিছু?

সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মতে কোনো গুপ্ত খাল নয়, এটি শ্রোতের প্রভাব। যাকে সমুদ্র বিজ্ঞানের ভাষায় Rip current বলা হয়। এটি একটি স্থানীয় স্রোত যা উপকূলরেখা থেকে সমুদ্রের দিকে, লম্ব বা তীরের তীব্র কোণে প্রবাহিত হয়। যার কারণে একে গুপ্ত খাল বলছেন কেউ কেউ।

একটি সমুদ্র সৈকত সাধারণ ভাবে তীর থেকে সাগরের দিকে ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো প্রাকৃতিক বা ভৌগলিক কারণে সৈকত তীর থেকে কিছু দূরে সমুদ্রতল কিছুটা উঁচু হয়ে একটি বাঁধ, প্রাচির বা রিপ তৈরি করে। সৈকতের নিকটবর্তী এই বাঁধ বা প্রাচিরের উচ্চতা সমান না হলে, সমুদ্রের ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ে সাগরে ফিরে যাবার সময় নিচু স্থানটিতে একটি চিকন পথ তৈরি করে প্রবল বেগে সমুদ্রে ফিরে- ঊল্টামুখি প্রবাহ বা স্রোত তৈরি করে। এটিই মূলত Rip current (রিপ স্রোত বা উল্টো স্রোত)।

যেখানে প্রাকৃতিক কারণে কোন গর্ত বা চ্যানেল তৈরী হয় সেখানে রিপ কারেন্ট তৈরী হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে। আবার রিপ কারেন্ট এক জায়গায় স্থির থাকবে এমনাও নয়। বালুকাময় সৈকতের যে কোনো স্থানে বালু সরে গিয়ে লম্বা খাঁজে তৈরী হতে পারে। সেখানেও সৃষ্টি হতে পারে উল্টো স্রোতের।

রিপ কারেন্ট যে স্থানে তৈরী হয় সেখানকার পনি আপাতদৃষ্টিতে খুবই শান্ত দেখা যায়। সেখানকার জলরাশি অপেক্ষাকৃত স্বচ্চ হয়ে থাকে। আশেপাশের তুলনায় এখানে ফ্যানাযুক্ত কোন ঢেউ দেখা যায় না।

এ ধরনের রিপ কারেন্ট ছোট এলাকা নিয়ে তৈরি হলেও বেশ খরস্রোত হয়ে থাকে যা তুখোড় সাঁতারুকে ও হার মানায়। মুহূর্তে টেনে নিতে পারে সাগরে।

রিপ কারেন্ট মানুষকে পানির নিচের দিকে টেনে ডুবিয়ে দেয় না। বরং উপকূল থেকে অনেক দূরে টেনে নিয়ে যায়। রিপ স্রোত সাধারণত নীচের দিকে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়, যার ফলে একজন পর্যটকের পা নিচ থেকে ছিটকে যেতে পারে, যাতে তার মনে হয় যেন পানির নিচে কিছু একটা তাকে টানছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে ও তীরের দিকে প্রবল শক্তিতে সাঁতার কাটতে থাকে ও এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে সাগরে ভেসে যায়। ভয়, আতঙ্ক, ক্লান্তি বা সাঁতারের দক্ষতার অভাবেই মৃত্যু হয় এই উল্টো স্রোতের কবলে পড়া অধিকাংশ মানুষের।

শুধু কক্সবাজার সেকতে নয়, উপকূলের যে কোনো স্থানে তৈরি হতে পারে এমন রিপ কারেন্ট। এমন স্রোতে পড়লে আতঙ্কিত না হয়ে সর্বপ্রথম মনোবল ধরে রাখতে হবে। তারপর সাঁতার কাটার চেষ্টা না করে নিজকে ভাসিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে উল্টো স্রোত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করার পরামর্শ দেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

oceantimesbd.com