পর্যটনের মহাপরিকল্পনা তৈরিতে ৩ বছর পার, ব্যয় ২৯ কোটি!

দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে তিন বছর আগে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। কিন্তু আজ পর্যন্ত মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। অথচ পরিকল্পনা করতে ২৯ কোটি টাকা ব্যয় করছে তারা।

এক মহাপরিকল্পনা করতেই যদি তিন বছর লাগে তা বাস্তবায়নে কয় যুগ লাগবে- এমন প্রশ্ন তুলেছেন পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজে জড়িত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়হীনতায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের নামে তারা শুধু কালক্ষেপণ করছে। ফলে দিন দিন দেশের পর্যটন ব্যবস্থা তলানিতে যাচ্ছে।

তবে ট্যুরিজম বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩০ বছর মেয়াদি এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসেই এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু বুধবার (৩০ নভেম্বর) পর্যন্ত ঠিক কতো শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে তা জানাতে পারেননি তারা।

মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে করোনার অজুহাত দেন প্রকল্প পরিচালক ও ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ সাইফুল হাসান। তিনি বলেন, আমার জানা মতে প্রকল্পের কাজ প্রায়ই শেষ। চলতি মাসেই তা চূড়ান্ত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে।

কিন্তু গতকাল বুধবার (৩০ নভেম্বর) পর্যন্ত ঠিক কতো শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, তা তিনি আগামী সপ্তাহে জানাতে পারবেন বলে জানান।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের গবেষণা ও পরিকল্পনা শাখা সূত্র জানায়, ২০২০ সালে বিদেশি পরামর্শক সংস্থা আইপিই গ্লোবালের সঙ্গে মহাপরিকল্পনা তৈরির চুক্তি করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন শুরু হয়। এই বছরের ৩০ জুন তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে কাজটি আটকে যায়। পরে চলতি মাস (ডিসেম্বর ২০২২) পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়ে। ভ্যাট ও এআইটিসহ এই প্রকল্পের চুক্তিমূল্য প্রায় ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

ট্যুরিজম বোর্ড ও আইপিই গ্লোবাল জানায়, স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি এই ভাগে মহাপরিকল্পনাটি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা হবে দেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা, এর শক্তি কতটুকু, দুর্বলতা কোথায়, সম্ভাবনা কেমন, কোন ধরনের সংকট রয়েছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা হবে বাংলাদেশের পর্যটনের ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজিক অবজেক্টিভস, প্রায়োরিটিস এবং লিংকেজ। তৃতীয় পর্যায়ে জোন বা এরিয়া নির্দিষ্ট করে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে। প্রোডাক্ট উন্নয়নের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বিনিয়োগের কৌশল অন্তর্ভুক্ত করে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত এবং বিপণন ও প্রমোশনাল কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

এছাড়া মেলা, ফেস্টিভ্যাল, কার্নিভাল, কালচারাল অনুষ্ঠান, ব্র্যান্ডিং, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা, ভিডিও নির্মাণ, ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রদর্শনী ও ওশান ট্যুরিজমকে বেসরকারি উদ্যোগে চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এই মহাপরিকল্পনা তৈরিতে অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। জানতে চাইলে পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আলী কদম জাগো নিউজকে বলেন, আমার জানা মতে মহাপরিকল্পনার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এটি তৈরি করার পর অংশীজনদের সমন্বয়ে ন্যাশনাল ট্যুরিজম কাউন্সিল মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের পর্যটন খাতে বিপ্লব ঘটবে।

দেশের পর্যটন শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শেষ হবে। ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পর্যটন নতুন যুগে প্রবেশ করবে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: ,

oceantimesbd.com